দীপক সাহা (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
বন্দিদশা থেকে ভারতমুক্তির দিন। অন্যায়, অত্যাচার, অজস্র প্রাণের বলিদানের শেষ দিন ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। স্বাধীনতা লাভের মাহেন্দ্রক্ষণে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু বলেছিলেন, সারা বিশ্ব যখন ঘুমাবে ভারতবর্ষ জেগে উঠবে নিজের মহিমায়। লালকেল্লায় লাহোরি গেটের উপর উত্তোলিত হয় তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা। বিসমিল্লাহ সানাই দেশবাসীকে রোমাঞ্চিত করে। তারপর থেকে এটি প্রতীকী অনুষ্ঠান হিসেবে পালন হয় প্রতি বছর। পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান, কুচকাওয়াজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে দিনটি পালিত হয়। স্বাধীনতার ৭৫ বছর সম্পূর্ণ! স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন। এটা আমাদের সকলের সৌভাগ্য যে আমরা স্বাধীন ভারতের এই ঐতিহাসিক সময়ের সাক্ষী হচ্ছি। এই পবিত্র দিনে সেই বীর শহিদদের আভূমি প্রণাম জানাই যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক।এই পূণ্য অবসরে সেই বীর সৈনিকদের প্রণাম জানাই যাঁরা স্বাধীনতার পরও দেশ রক্ষার পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে সর্বোচ্চ বলিদান দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। যে পূণ্যাত্মারা স্বাধীন ভারতের পুনর্নিমাণে উন্নয়নের প্রতিটি ইঁট গেথেছেন, ৭৫ বছরে দেশকে উন্নতির সোপানে নিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের সকলের চরণে শত কোটি প্রণাম।
এই ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং জাতীয় চেতনাকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতার ৭৫ তম বার্ষিকী স্মরণে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ অনুষ্ঠানের সূচনা করতে গুজরাটের আহমেদাবাদের সবরমতি আশ্রম থেকে একটি পদযাত্রা (স্বাধীনতা পদযাত্রা) চালু করেন। এমন অনেক মানুষ আড়ালে ছিলেন যাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে শহীদ হয়েছেন এবং তাঁদের আত্মত্যাগের কারণেই আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সামিল থেকেছেন যাঁরা তাঁদের স্মরণ করার জন্য একটা উদ্যোগের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। যাঁরা উপেক্ষিত তাঁদের দিকে আলো ফেলার শুভ প্রচেষ্টা । আজাদির অমৃত মহোৎসব ১৫ আগস্ট, ২০২২ এর ৭৫ সপ্তাহ আগে শুরু হয়েছিল এবং ১৫ আগস্ট, ২০২৩-এ শেষ হবে। “ভারত কি আজাদি কা অমৃত মহোৎসব” প্রকল্পটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ১২মার্চ, ২০২১-এ চালু করেছিলেন । স্বাধীনতার অমৃত উৎসব কোনও ধর্ম, বর্ণ বা জাতের জন্য নয়, সমগ্র রাষ্ট্রের জন্য, এবং গোটা দেশ এটি উদযাপন করছে। এটি একই সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা বলে এবং সহিংস আন্দোলন, সংগ্রাম গঠনে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, ভগত সিং প্রমুখের ভূমিকাকেও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে।
গীতায় শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন –“সম-দুঃখ-সুখম ধীয়ম সঃ অমৃতত্বায়ো কল্পতে”। অর্থাৎ, যিনি সুখ-দুঃখ-আরাম-সমস্যার মধ্যেও ধৈর্য্যের সঙ্গে অটল থাকেন, তিনিই অমৃত পান, অমরত্ব অর্জন করেন। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব–এর অর্থ হল, স্বাধীনতার প্রাণশক্তির অমৃত মহোৎসব। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রেরণার অমৃত। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব-এর অর্থ হল, নতুন ভাবনার অমৃত, নতুন সঙ্কল্পের অমৃত। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব-এর অর্থ হল, আত্মনির্ভরতার অমৃত। আর সেজন্য এই মহোৎসব রাষ্ট্র জাগরণের মহোৎসব। এই মহোৎসব সুশাসনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মহোৎসব। এই মহোৎসব বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের মহোৎসব। এটি কোনও বর্ণের উৎসব নয়, বরং সমগ্র দেশের একটি উৎসব, এবং সমগ্র দেশ এই উৎসবটিকে স্মরণ করছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র ভারত একসাথে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। আজাদির অমৃত মহোৎসব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনুপ্রেরণার অমৃত প্রতীক। স্বাধীনতার অমৃত উৎসব বা স্বনির্ভরতার অমৃত উৎসব কর্মসূচি চালু করার উদ্দেশ্য হল স্বাধীনতা যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। স্বাধীনতার অমৃত উৎসবের তাৎপর্য সমগ্র দেশের কোণায় কোণায় পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি বিজড়িত আন্দামানের সেলুলার জেল, পশ্চিমবঙ্গেত প্রেসিডেন্সি জেল, রাইটার্স বিল্ডিং, অরুণাচল প্রদেশের অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান যুদ্ধের সাক্ষী কেকর মোনিঙ্গ-এর মাটি, মুম্বাইয়ের আগস্ট বিপ্লবের ময়দান, পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালা বাগ, উত্তরপ্রদেশের মীরাট, কাকোরি এবং ঝাঁসি। সারা দেশের এরকম অনেক স্থানে একসঙ্গে অমৃত মহোৎসব পালন হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন স্বাধীনতার অসংখ্য লড়াই, অসংখ্য আত্মোৎসর্গ আর অসংখ্য মানুষের তপস্যার প্রাণশক্তি ভারতে একসঙ্গে পুনর্জাগ্রত হচ্ছে।
যখন আমরা পরাধীনতার সেই দিনগুলির কথা ভাবি, কোটি কোটি মানুষ কয়েক শতাব্দী ধরে স্বাধীনতার একটি সকালের অপেক্ষা করেছেন, তখন এই অনুভব আরও তীব্র হয় যে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন কতটা ঐতিহাসিক, কতটা গৌরবময়। স্বাধীনতার এই পার্বণে ভারতের পরম্পরার সঙ্গে মিশে আছে স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনি। স্বাধীনতা আন্দোলনে ভিন্ন ভিন্ন লড়াই, ভিন্ন ঘটনারও প্রেরণা রয়েছে, বার্তা রয়েছে যেগুলিকে সম্বল করে ভারত এগিয়ে চলেছে। ১৮৫৭-র স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহাত্মা গান্ধীর বিদেশ থেকে ফিরে আসা, দেশকে সত্যাগ্রহের শক্তি আবার মনে করিয়ে দেওয়া, লোকমান্য তিলকের ‘পূর্ণ স্বরাজ’-এর আহ্বান, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজের দিল্লি অভিযান, ‘দিল্লি চলো’–এই স্লোগান আজও ভারত ভুলতে পারে না। ১৯৪২-এর অবিস্মরণীয় আন্দোলন, ইংরেজ ভারত ছাড়োর সেই ঘোষণা–এরকম কত না অসংখ্য পর্যায় রয়েছে, যা থেকে আমরা প্রেরণা গ্রহণ করি, প্রাণশক্তি পাই। এরকম কত না আত্মবলিদানকারী সৈনিক রয়েছেন, যাঁদের প্রতি দেশ প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে।
১৮৫৭-র বিদ্রোহে মঙ্গল পাণ্ডে, তাঁতিয়া তোপের মতো বীরেরা, ইংরেজ বাহিনীর সামনে নির্ভীক গর্জন করে ওঠা রানি লক্ষ্মীবাঈ, কিত্তুরের রানি চেন্নাম্মা, রানি গাইদাঁলু, চন্দ্রশেখর আজাদ, রামপ্রসাদ বিসমিল, ভগৎ সিং, সুখদেব, রাজগুরু, আসফাকুল্লাহ খান, গুরু রাম সিং, টিটুসজি, পল রামাস্বামীর মতো বীরেরা কিংবা পণ্ডিত নেহরু, সর্দার প্যাটেল, বাবাসাহেব আম্বেদকর, সুভাষ চন্দ্র বোস, মৌলানা আজাদ, খান আব্দুল গফর খান মতো অসংখ্য জন-নায়ক –এইসব মহান ব্যক্তিত্ব স্বাধীনতা আন্দোলনের পথপ্রদর্শক ছিলেন। আজ তাঁদের স্বপ্নের ভারত গড়ে তুলতে আমরা মিলিত সঙ্কল্প নিচ্ছি, তাঁদের থেকে প্রেরণা নিচ্ছি।
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে এরকম কত আন্দোলন হয়েছে যেগুলির কথা দেশের ইতিহাসে সেভাবে লেখা হয়নি যেভাবে লেখা উচিৎ ছিল। এই লড়াইগুলির প্রতিটিই ভারতে অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের শক্তিশালী ঘোষণা। সেই শাশ্বত চেতনা, সেই অদম্য শৌর্য ভারতের প্রতিটি ক্ষেত্র, প্রতিটি গোষ্ঠী, প্রতিটি সমাজ স্বাধীনতার লড়াইয়ে নিজেদের মধ্যে প্রজ্জ্বলিত করে রেখেছিল। জননী জন্মভূমিশ্চ সর্গাদপী গরীয়সী –এই মন্ত্র প্রজ্জ্বলিত রেখেছিল, এই মন্ত্র আজও আমাদের সমানভাবে প্রেরণা জোগায়। আমাদের এই ইতিহাসে কোল আন্দোলন, হো সংঘর্ষ, খাসি আন্দোলন, সাঁওতাল বিদ্রোহ, কাছোহা, কাছাড়, নাগা সংঘর্ষ, কুকি আন্দোলন, ভীল আন্দোলন, মুণ্ডা বিদ্রোহ, সন্ন্যাসী-ফকির আন্দোলন, রমোসি সংঘর্ষ, কিত্তুর আন্দোলন, ত্রাবাঙ্কোর আন্দোলন, বরদলৈ সত্যাগ্রহ, চম্পারণ সত্যাগ্রহ, সম্বলপুর সংঘর্ষ, চুয়ার সংঘর্ষ, বুন্দেল সংঘর্ষ, মোপালা বিদ্রোহ – এরকম কত না আন্দোলন, সংঘর্ষ, বিদ্রোহ দেশের প্রত্যেক ভূখণ্ডে, পরাধীনতার প্রত্যেক সময়খণ্ডে স্বাধীনতার জ্যোতিকে প্রজ্জ্বলিত রেখেছে।
আমাদের দেশে আদিবাসী সমাজ নিজেদের বীরত্ব এবং পরাক্রমের মাধ্যমে লাগাতার বিদেশি শাসককে পরাস্ত করেছে। ঝাড়খণ্ডের ভগবান বিরসা মুণ্ডা ইংরেজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওড়িশার চক্রবিশোইও ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াই লড়েছেন। তেমনই লক্ষ্মণ নায়ক গান্ধীবাদী পথের চেতনা জনমানসে সঞ্চারিত করেছেন। অন্ধ্রপ্রদেশের মণ্যম ভিরূদু, অর্থাৎ জঙ্গলের বীর, আল্লুড়ি সিরারাম রাজু রম্পা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাসোলথা খুল্গচেরা মিজোরামে ইংরেজের বিরুদ্ধে আদিবাসী সংঘর্ষের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তেমনই গোমধর কুঁয়র, লসিত বরফুকন এবং সিরত সিং-এর মতো আসাম ও উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন যাঁরা দেশের স্বাধীনতায় অবদান রেখেছেন। গুজরাটে বরোদার পাশে জাম্বুঘোড়া যাওয়ার পথে নায়ক গোষ্ঠীর আদিবাসীদের বলিদানকে কিভাবে ভুলতে পারি। দেশ তাঁদের বলিদানকে সর্বদা মনে রাখবে।
স্বাধীনতার এই অসংখ্য আন্দোলনগুলিতে এরকম কত না সেনানী, সাধু, ফকির, মহাপুরুষ, অসংখ্য বীর বলিদান দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের বীরগাথা ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক একটি সোনালী অধ্যায়। ভারতমাতার এহেন বীর উজ্জ্বল পুত্র ও কন্যাদের ইতিহাস দেশের কোণায় কোণায়, গ্রামে গ্রামে রয়েছে। দেশের ইতিহাসের এই গৌরবগুলিকে সংরক্ষণ করতে সক্রিয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের এই মহানায়ক, মহানায়িকাদের জীবনের ইতিহাসও দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে, এঁদের জীবনগাথা, জীবনের সংঘর্ষ আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্থান-পতন, কখনও সাফল্য, কখনও অসাফল্য, আমাদের আজকের প্রজন্মের জীবনে নতুন পাঠ শেখাবে।
ইতিহাস সাক্ষী আছে, কোনও দেশের গৌরব তখনই সঞ্জীবিত থাকে যখন তা নিজের আত্মাভিমান এবং বলিদানের পরম্পরা পরবর্তী প্রজন্মকেও শেখায়, শিষ্টাচার প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চারিত হয়। কোনও দেশের ভবিষ্যৎ তখনই উজ্জ্বল হয়, যখন নিজেদের অতীতের অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্যের গর্বের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে থাকে। আর ভারতের তো গর্ব করার জন্য অফুরন্ত ভাণ্ডার আছে, সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে, চেতনা সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈভব আছে। সেজন্য স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপনের এই সুযোগ বর্তমান প্রজন্মের কাছে অমৃতসম। এ এমন অমৃত যা আমাদের প্রতি মুহূর্তে দেশের জন্য বাঁচতে, দেশের জন্য কোনও কিছু করতে প্রেরণা জোগাবে।
এই শুভক্ষণে আমাদের নবীনদের, ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের চেপে যাওয়া ইতিহাস লেখার কাজে উৎসাহিত করতে হবে। অতীত থেকে শিখে ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব আমাদের যুব সম্প্রদায়কেই নিতে হবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসাশাস্ত্র, রাজনীতি, শিল্প-সংস্কৃতি–সব ক্ষেত্রেই আগামী ভবিষ্যতকে আরও উন্নত করতে হবে। আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের অন্যতম উজ্জ্বল লক্ষ্য “ভারতকে বিশ্ব গুরু বানানো।” হাজার হাজার বছর পিছিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ভারতের। ভারত বিশ্বের অন্যতম প্রাচীনতম সভ্যতা এবং জ্ঞান কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি। ভারত যুগ যুগ ধরে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক পরিভাষায় বিশ্বব্যাপী আধিপত্য এবং নেতৃত্বের মহিমা অনুভব করেছে৷ যখন বাকি বিশ্ব ভূগর্ভস্থ গুহাগুলিতে আগুন জ্বালানোর জন্য লড়াই করেছিল তখন ভারত সভ্যতার সোপানে সদর্পে পা রেখেছিল। ভারতের মহত্ত্ব, পরিচয়, ঐশ্বর্য, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা পৃথিবীর অন্য কোনও জাতির কাছে ঈর্ষনীয়। তাও আমরা প্রায় ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার গ্লানি ভোগ করেছি। আমাদের উপনিবেশ করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার সময় ভৌগলিকভাবে জাতিকে বিভক্ত করেছিল। কিন্তু তারা অবিভক্ত দেশের চেতনাকে ছিন্নভিন্ন করতে পারেনি। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও আজও তা দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সংস্কৃতির কারণে। এখন আমাদের মহিমা পুনরুদ্ধার করার মুহূর্ত। এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে ভারতকে তার আগের গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়ে ফিরিয়ে আনার মধ্যে দিয়েই শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে স্বাধীনতা সংগ্রামী ও দেশপ্রেমিকদের প্রতি।
দৃঢ় বিশ্বাস, ১৩০ কোটি ভারতবাসী স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবে আন্তরিকভাবে যখন যুক্ত হবেন, লক্ষ লক্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামীর থেকে প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যাবেন, তখন ভারত আবার বিশ্ব মানচিত্রে প্রথম সারিতে অবস্থান করবে। যদি আমরা দেশের জন্য, সমাজের জন্য প্রত্যেকে এক পা এগোই, তাহলেই দেশ ১৩০ কোটি পা এগিয়ে যাবে। প্রত্যেক নাগরিকের সঙ্কল্প, প্রত্যেক সংস্থার সঙ্কল্প, প্রত্যেক সংগঠনের সঙ্কল্প দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটাই হবে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধার্ঘ্য।
Leave a Reply